তাসনুবা ইসলাম মীম,আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ ‘ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল’। হয়তো এমন প্রবাদ বাক্য বেঁচে রবে যুগের পর যুগ। তবে বেঁচে থাকবে না ফসলি জমির মাঠ। বরগুনা জেলার হাজার হাজার একর ধান চাষের উপযোগী ফসলি জমি কংক্রিটের দালানে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমির মাঠ। এতে চাষ উপযোগী জমি দিনের পর দিন সংকীর্ণ হয়ে আসছে।
কোন এক সময়ে দেখা যেত বরগুনা জেলা শহরের গ্রামাঞ্চলে নতুন ধান ঘরে আনার জন্য নানা ধরনের অনুষ্ঠান করা হত। নবান্ন উৎসব পালন করতো বিভিন্ন হিন্দুবাড়িতে। এখন আর এসব আনন্দ উৎসব তেমন একটা চোখে পড়ে না। পেশাজীবী চাষীরা চাষ ছেড়ে দৈনিক কাজে মন বসিয়েছেন। মাটিকাটা, রাজমিস্ত্রির জোগালি কাজের যোগান দেয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন একসময়ের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি ওয়ালা চাষিরা। শহরের জমি ক্রয় পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে শহরতলীর ফসলের আবাদী জমি ক্রয় করে টিনসেট ঘরের থেকে কংক্রিটের দালানে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ ফসলি জমি।
এমন দুর্দশা চলতে থাকলে এক সময় বাংলাদেশ হারাতে পারে উর্বরকৃত ফসলি জমি চাষের মাঠ। এর ফলে কেবল ধান নয় বরং নানাবিধ সবজি ফলনে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ। হারিয়ে যাবে নদী আর খালের পাশাপাশি ধানের আবাদ। হারিয়ে যাবে সেই গোতরে খাঁটা সোনালী ফলনের হাসিমুখ মাখা কৃষক। বরগুনা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ১শ’ ৩০ বর্গকিলোমিটার। যা ১ লক্ষ ৫ হাজার ৯ শ’ ২৬ হেক্টর চাষের জমি রয়েছে। বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, সরকারের গ্লোবাল এসডিজির মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেহেতু এক সময় ফসলি জমিতে নগরায়ন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে মূল ফসলি জমি সংকুচিত হয়ে আসবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী অনাবাদী ও বসতবাড়ির সামনে থাকা ফাঁকা জমিতে বিভিন্ন মৌসুমি সবজির বাগান করে দিচ্ছি। যাতে পারিবারিক সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন মৌসুম ভিত্তিক চাষাবাদের জন্য ৮১ টি পজিশন চলমান রয়েছে। যেখানে রবি মৌসুম সহ নানা মৌসুমের সবজি চাষ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তিন ফসলী জমির জায়গায় ৪ ফসলি জমি চাষের বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলছে। সেখানে ফসল ফলনের ক্ষেত্রে ১৩০ দিনের জায়গায় ৯০ দিন সময় নেয়া হবে।
তবে বরগুনা জেলায় মূল সমস্যা লবণাক্ত ও জোয়ারের পানি। এবারের দীর্ঘমেয়াদি বর্ষণের ফলে সবজি, পানের বরজ ও বীজতলায় ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হিসেব করে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। আশা করছি আগামীতে কিছুটা হলেও কৃষকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আমাদের কৃষি অধিদপ্তরে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের জনবল সংকট। তাই সঠিকভাবে কৃষকদের বাড়ি পর্যন্ত কৃষি সমস্যা ও এর সমাধান পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তবুও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ফসলের উৎপাদন বাড়াতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।